
শরীয়তপুর থেকে আক্তার হোসেন।।শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের বিএনপি’র দুই গ্রুপের ইজারার দ্বন্দ্বে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।শুক্রবার (১৮ জুলাই) ভোর রাত ৩টা থেকে কোন গাড়ি আসছে নি বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন।জানা যায়, জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোমিন দিদার ও সখিপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিসান বালার মধ্যে শরীয়তপুর চাঁদপুর ফেরিঘাট নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ইজারা উঠানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এতে এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় দুই আড়াই শতাধিক গাড়ি আটকা পড়েছে।স্থানীয় ও ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, টেন্ডারের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিসি ঘাট টি ইজারা দেয়। গত ১ জুলাই সখিপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইউসুফ জিসান বালা সেই টেন্ডারের মাধ্যমে ঘাট টি ইজারার টাকা উঠাতে শুরু করে। এর আগে জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোমিন দিদার সেই ঘাটটির ইজারাদার ছিলেন। বিআইডব্লিউটিসির টেন্ডারের আগে ক্ষতিপূরন দাবি করে একটি মামলা করেন তিনি। গত ১০ জুলাই হাইকোর্ট আবার ৩ মাসের জন্য মোমিন দিদার কে ঘাট ইজারা দেন। হাইকোর্টের রায় পেয়ে মোমিন দিদার ঘাট দখলে নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জিসান বালা লোকজন শরীয়তপুর চাঁদপুর ফেরি ঘাটের ডিএমমখালি ইউনিয়নের মৃধা কান্দি এলাকায় যানবাহন আটকে দেয়।সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুর চাঁদপুর ফেরিঘাট ছুমছাম নীরবতা গাড়ি নেই। শুধুমাত্র ট্রলার দিয়ে পার হচ্ছে মানুষ। চাঁদপুর অংশ থেকে গাড়ি বোঝাই ফেরি ছেড়ে আসছে। কিন্তু শরীয়তপুর অংশে গাড়ি না থাকায় ফেরি ছাড়ছে না। ডিএমখালি থেকে বালার বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারে যানবাহন নদী পার হওয়ার জন্য আটকে আছে। সামনের একটি গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককেই ঘুরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। যাতে করে এই ফেরি দিয়ে না যায়। অন্য জায়গা দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।ট্রাক ড্রাইভার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, গতকাল সকালে বেনাপোল থেকে ছেড়ে রাত ১২ টায় এখানে এসে পৌঁছেছি। দেখি গাড়ি চলাচল বন্ধ। দুই পাশেই কোন গাড়ি বের হতে পারছে না। এর মধ্যে শুনলাম কারা জানি আমাদের এক ট্রাকের হেলপারের পা ভেঙে দিয়েছে। এভাবে যদি সড়কে নৈরাজ্য হয় তাহলে আমরা সাধারণ যানবাহন চালকরা তাদের কি অবস্থা হবে।পিকআপ চালক মোঃ রুবেল বলেন, সকাল ৯ টায় এখানে এসেছি। আমার সামনে দীর্ঘ সারির গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। পরে পুলিশ এসে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়। আমি আর ফেরি পার হতে পারিনি। ফেরি ঘাটে নাকি সমস্যা হয়েছে।ঘাটের সাথে জড়িত সখিপুর থানা যুবদলের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ মাসুম বালা বলেন, সরকার আমাদের ইজারা দিয়েছে। এই ঘাট আমাদের, ইজারার টাকাও আমাদের। তাই আমরা পণ্যবাহী গাড়িগুলো আটকে রেখেছি। যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। যদি একদিন ঘাট বন্ধ থাকে সরকার তো আমাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেবে না তাই আমরা গাড়ি আটকে রেখেছি।জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোমিন দিদার বলেন, ৫ আগস্টের পর আমি এই ঘাটের ইজারা নেই। প্রতিনিয়ত আমি লোসখান সম্মুখীন হতে থাকি। তাই বিআইডব্লিউটিসির কাছে আবেদন করি যাতে করে তারা আমার এটিকে পুষিয়ে দেয়। কিন্তু তারা সেটি না করে অন্য একটি ইজারাদার নিয়োগ দেয়। আমি তখনই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি। গত ১ জুলাই বিআইডব্লিউটিসি তাদের ইজারাদার কে বসান। আমি চলে যাই। আমি কোডের মাধ্যমে রায় নিয়ে এসেছি। এই ঘাট আমি তিন মাসের জন্য ইজারা পেয়েছি। গত ১০ জুলাই রায় হয়। আমার হাতে আসতে আসতে সময় লাগে। তাই আমি কাগজ হাতে আসার পর আমার লোকদের দিয়ে ইজারার টাকা কালেকশন করাচ্ছি। কিন্তু সখিপুর থানা যুবদলের সভাপতি মাসুম বালার নেতৃত্বে ও জিসান বালা মিলে এই রুট দিয়ে যাওয়া যানবাহনগুলো আটকে রাখছে। বিভিন্নজন থেকে চাঁদ দাবি করছে। মারধর করছে গাড়ি চালকদের। ঘুরিয়ে দিচ্ছে বলছে এখান দিয়ে ফেরি বন্ধ। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এটির সমাধান চাই।মাইদুল ইউসুফ জিসান বালা বলেন, বিআইডব্লিউটিসির ডাক এর মাধ্যমে আমি এই টেন্ডারটি পাই এক বছরের জন্য কিন্তু সাবেক ইজারাদার মুমিন দিদার এটির বিরুদ্ধে আগেই আপিল করেছে। এখন বিআইডব্লিউটিসি আমাদের কিছুই বলেনি। আমরা আমাদের ঘাট ফিরে পেতে চাই। সরকার তো আমার এই ঘাটের ক্ষতিপূরণ দেবে না। সরকার এক বছরের জন্য আমাকে ঘাট ইজারা দিয়েছে। কিন্ত সাবেক ইজারাদার মোমিন দিদার ইজারার জন্য আপিল করেছেন। এই সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমার কাছে আসেনাই।নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ইকবাল বলেন, শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ইজারার টাকা উঠানো নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধ চলে আসছিল। শুক্রবার সকালে ঘাটের ইজারা উঠানোকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এতে এ রুটে ফেরি পাড়াপাড় বন্ধ হয়ে যায়। এতে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়ে যাত্রী ও চালকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি উপরোক্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।সখিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওবায়দুল হক বলেন, ঘাটের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে। বিকেল ৪ টায় ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে বিবদমান উভয় গ্রুপের লোকজন নিয়ে বসবেন।