1. admin@dainikdigantor.com : admin :
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২২ অপরাহ্ন

রাজবাড়ীতে নূরাল পাগলার দরবারে ভাঙচুর, কবর থেকে লাশ তুলে অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষে আহত ৫০

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

 

জেলা প্রতিনিধি।। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ কবর থেকে তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদি জনতা। এছাড়া নুরাল পাগলার দরবার শরিফ ও বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসময় সংঘর্ষে দরবারের ভক্তসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি মারা যাওয়া নুরুল হকের কবর মাটি থেকে কিছুটা উপরে দাফন করে সেখানে কাবা শরিফের আদল দেয়া হয়। এ নিয়ে তৌহিদি জনতার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। স্থানীয় প্রশাসন দুপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। তার মধ্যেই জুমার নামাজের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা এসে শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা দরবার শরিফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

পুলিশ আগে থেকেই সেখানে থাকলেও বিপুল মানুষের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা সক্ষম হয়নি। পরে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন তৌহিদি জনতা পিছু হটে নুরুল হকের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তখন আহতদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পাঠায়। এর কিছু পরে বাড়িতে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায় তৌহিদি জনতা। তখন তারা বাড়ির সামনে থাকা নুরুল হকের কবর থেকে মরদেহ তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে তারা মরদেহটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এ সময় তৌহিদি জনতার একজন মো. আল আমিন বলেন, নুরাল পাগল একটা সময় নিজেকে ইমাম মাহাদি দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি খোদাও দাবি করেছেন। তার কর্মকাণ্ড ছিল শরিয়তবিরোধী। এসব ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মেনে নিতে পরে নাই। যে কারণে জনতা আজ নুরাল পাগলের দরবার ভেঙে দিয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে তার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলেছে।

গোয়ালন্দের ইউএনও নাহিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আহতের সঠিক সংখ্যা এখনও বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব রয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, জুমার নামাজের পর তৌহিদি জনতা জড়ো হন। তাদের একটা অংশ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। সে সময় পুলিশের গাড়ি ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙ্চুর করে। পরে নুরুল হকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নুরুল হক আশির দশকের মাঝামাঝি নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ বলে দাবি করেছিলেন। তখন চাপের মুখে তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে আবার তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। তার বেশ কিছু ভক্ত-অনুসারীও রয়েছে।

২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবার শরীফের ভেতরে কাবা শরিফের আদলে রং করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নিচু, রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মাহাদির দরবার শরিফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি তোলেন তৌহিদি জনতা বিক্ষোভ করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি সভাও হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে একটি কমিটিও গঠন করে। কবরের ব্যাপারে প্রশাসন নুরুল হকের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলে। পরিবার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। শুক্রবার সেখানে হামলার ঘটনা ঘটল।

তবে নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী বুধবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমার বাবা ইমাম মাহাদির দ্বীন প্রচারক ছিলেন। মৃত্যুর পর তার ওছিয়ত মোতাবেক কিছুটা উঁচু করে ইসলামের বিধান মেনে দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ১২ ফুট উঁচু করার অভিযোগ সত্য নয়। তিন থেকে চার ফুট উঁচু হতে পারে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরো খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ দৈনিক দিগন্তর © বাজ এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।। Regi No-280138  
Theme Customized By Shakil IT Park