
অথই নূরুল আমিন : ২০২০ সালে আমার লেখা একটি প্রবন্ধ।আজকে সেই ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হলো।ভালো লাগছে আমার কাছে।লেখাটি সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ রইল।”প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগ বোরো ধান কেটে দিল বেশ কিছু কৃষকের।আসলে ছাত্রলীগের জন্ম থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তাদের সহস্ত্র সুন্দর কার্যক্রম দেখেছি, কিছু শুনেছি।কিছু অর্জন তাদের স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাস হয়ে আছে। ২০২০ ছাত্রলীগের ধান কাটা নিয়ে হয়তো গিনেস বুকে নাম উঠবে না।এই অকৃতজ্ঞ সমাজ হয়েতো তাদের এই মহৎ কাজটির কথা ভুলে যাবে।তবে যে কৃষকের বিপদে ছাত্রলীগ এগিয়ে এসেছিলো সে কৃষকেরা এবং তাদের প্রজন্মরা কোনদিন ভুলবে না এটা আমার বিশ্বাস।২। ১৯৯৬ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে, ছাত্রলীগের চরিত্র পাল্টে যায়।তারা ছাত্রগিরী রেখে কেমন জানি, ভোলা মন ভোলার মতো বিভিন্ন কাজকর্ম করতে লাগল। ইতিহাসের সমস্ত অর্জনকে, বিসর্জন দিতে লাগল তার আর গতিরোধ করা গেল না গত ২৪ বছরেও।৩। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এর মধ্যে সারাদেশে ছাত্রলীগের অনেকটা সময় দায়িত্বে ছিল। বাহাদুর বেপারী বনাম অজয়কর খোকন। এই পাঁচটি বছর ধরে ওরা দুজনে ছাত্রলীগকে এমন ভুল পথে পরিচালনা করতে লাগল যে, ছাত্রলীগটা সেদিন ছত্রভঙ্গ লীগ হিসাবে বানিয়ে দিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বাহাদুর বেপারী এবং অজয়কর খোকন ছিল বড় ত্রাস। তাদের নাম শুনলে দেশের তখনকার অনেক মন্ত্রী ও লাখ টাকার চেক দিয়ে দিত চাঁদা। আর ব্যবসায়ীদের কাছে তারা দমবন্ধ এক আতঙ্কের নাম ছিল। যে সময়টায় ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানোর মুখ্য সময় ছিল। সেই সময় এই ছাত্রলীগকে অসৎ ভাবে পরিচালনা করেছিল। সেদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরো বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা।৪।দেশের একজন নাগরিক হিসেবে মনে খুব কষ্ট লাগে, যখন শুনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন কুকীর্তির কথা, অন্যায় করা, হত্যা চাঁদাবাজিসহ নানা অপকীর্তি তখন মনের মাঝে খুব কষ্ট পাই। এত সুন্দর একটি সংগঠন। এ সংগঠন সবসময় মানুষের পাশে থাকবে। কোথায় কোন উন্নয়ন করতে হবে। কোথ ায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরাজীর্ণ অবস্থাসহ সরকারকে অবগত করবে।গোটা জাতিকে শিক্ষিত করার জন্য ১০ দফা ১৫ দফা দাবি সরকারকে দিবে। শিক্ষা খাতের ব্যয় কমানো হবে। শিক্ষার মান বাড়ানো হবে। এমন কোনো আলোচনা আমি ২০০১ এর পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন ছাত্রলীগের নেতার মুখে শুনিনি। এর চেয়ে বড় দুঃখের আর কি আছে।৫। ছত্রভঙ্গ ছাত্রলীগের বড় প্রমাণ পাওয়া গেল গত ভিপি নির্বাচনে। টাকি মাছের মত ওজনের একটি ছেলে নুরুল হক নুর যখন বিপুল ভোটে ভিপি হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও নুরুল হক নুর হয়ে গেল রাতারাতি শোল মাছ। ছাত্রলীগের এই চরম ব্যর্থতা ঢাকতে নুরের উপর শুরু হলো হামলার পর হামলা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান কার নেতৃত্বে চলে, কেমন ভাবে চলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে আজকে সে খবরটি নিতে চেষ্টাও করছে না, চিন্তাও করছে না।আমার জানামতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে যে সকল শিক্ষকবৃন্দ পদাধিকার বলে চলে গেছেন বা আছেন তারা ৮০% আওয়ামী বিরোধীমনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ৭৫% ছাত্রছাত্রী আওয়ামী বিদ্বেষী মনোভাবের শিক্ষার্থী। এর জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন অবকাঠামো যত দায়ী ততটাই দায়ী ছত্রভঙ্গ ছাত্রলীগ।৬। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে অবস্থা আজ দেখা যাচ্ছে।আওয়ামী লীগ কোনদিন ক্ষমতা হারালে ছাত্রলীগের অবস্থা হবে সনাতন ধর্মের দুর্গা বিসর্জনের মতো। মাটি মিশে যাবে পানিতে। নাড়া গুলো তার আকৃতি নিয়ে জলে ভাসে যেমন কিছুদিন। মনে হচ্ছে রাষ্ট্রের অপশক্তি, দুরভিসন্ধি মূলক চক্রান্তের শিকার ছাত্রলীগ। তারা শত চেষ্টা করেও শক্তি অর্জন করতে পারছেনা। সে কুচক্রীমহল জানে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে হলে, ছাত্রলীগকে দুর্বল করতে হবে। আশাকরি বর্তমান কর্ণধারেরা এই বিষয়টির দিকে নজর দিবেন।ছাত্রলীগ সুন্দর একটি সংগঠন, শক্তিশালী সংগঠন হোক।সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চায়। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছে থাকা কিছু ব্যক্তি মাঝে মাঝে, কিছু কুমন্ত্রণা দিয়ে বিষয়টি অন্যত্র মোড় দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ছাত্রলীগ অন্যায় করলে কঠোর হাতে দমন করার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। কিন্তু ছাত্রলীগকে শক্তিশালী এবং সুন্দর সংগঠন করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা কেন? নিশ্চয়ই এখানে কোনো অশুভ শক্তির হাত আছে। গভীরে কোন চক্রান্ত আছে।৭। গত ১১ বছরে ছাত্রলীগের একটি অফিস থাকা দরকার ছিল ৫২ তলা বিল্ডিং। শাহবাগের যেকোনো স্থানে (ছাত্রলীগ ভবন নামে )। সেখানে ছাত্রলীগের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজেরও কর্মের জাদুঘরসহ বাংলাদেশে ঐ ছাত্রলীগ ভবনটি হতো আরেক ইতিহাস। ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস। আগামী প্রজন্ম, এই দেশ এই সমাজ গঠনে, নিতো বড় বড় ভূমিকা। তা নাকরে, হয়ে গেছে উল্টা। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে সবচেয়ে বড় নেশাখোর ছেলে বা মেয়েটা ছাত্রলীগের নেতা বা নেত্রী। পাড়া মহল্লার সবচেয়ে বখাটে ছেলেটা থানা ছাত্রলীগের বড় পদে। আশা করছি আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য এই বিষয়টি নজর দিবে। এবং ছাত্রলীগের নিজস্ব ৫২ তলা বিল্ডিংটি করার জন্য দুজনসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেবে। তাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এগিয়ে যাক। ভালো থাকুক ছাত্রলীগ।”
লেখক : কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী
(আজকের লেখাটি আমার লেখা নির্বাচিত কলাম প্রধানমন্ত্রীর মানব সম্পদ উন্নয়ন উপদেষ্টা গ্রন্থ থেকে সংগৃহিত, পৃষ্টা নং ২২ — ২৪ )