
আবুল হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরগুনার তালতলীতে হার পাওয়ার প্রকল্পের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৯ অক্টোবর আইসিটি অধিদপ্তরের আওতাধীন হার পাওয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে ৮০টি ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়।ল্যাপটপ বিতরনে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্প বাস্তাবায়নকারি ভ্যান্ডার প্রতিষ্ঠান সার্ভিস ইঞ্জিন ও ইনফিনিটি’র বিরুদ্ধে। পাশ-ফেল বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেওয়া, তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ক্লাস করেনি তাদের নামে ল্যাপটপ ইস্যু করে বিতরণ করা হয়েছে।
চলমান গ্রাফিক্স ডিজাইন ওয়েব ডেভলপমেন্ট ডিজিটাল মার্কেটিং ও আইটি কোর্স গুলো বিনামূল্যে হলেও প্রশিক্ষনার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা।গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ওয়েব ডেভলপমেন্ট প্রশিক্ষণ পেতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি উল্লেখ্য থাকলেও এসএসসি পাসে সুবিধা দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশিক্ষনার্থী জানান, আমার কাছ থেকে ৫০০০ টাকা নগত নেওয়া হয়েছে আরো ৫০০০ হাজারের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে।এভাবে আমার মতো অনেক প্রশিক্ষনার্থীকে টাকা দিতে হয়েছে। অন্য এক প্রশিক্ষনার্থী জানান, আবেদনকৃত আমার ছোট বোনের জন্য ৬ হাজার টাকা দাবী করে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ট্রেইনার সিরাজুল ইসলাম (শাহিন) ,তাকে টাকা না দেওয়ায় তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
মাহিনুর নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আমার কাছ থেকে আমতলীর ট্রেইনার শোভন ৫০০০ টাকা নিয়েও আমার নাম বাদ দিয়েছে। এভাবে জনপ্রতি ১০০০০-১৫০০০ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কো অর্ডিনেটর মাসুদ রানা ও মলয় দাস । তালতলী উপজেলার আবেদন করা প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অন্য জেলা উপজেলা থেকে তাদের আত্মীয় স্বজন এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে ল্যাপটপ। পারভীন (TAN2024070034) নামের এক প্রশিক্ষনার্থীর নামে ল্যাপটপ ইস্যু করা হলেও তাকে চিনে না ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষক। প্রশিক্ষনার্থীর যোগাযোগ নাম্বারে পাওয়া যায় কো অর্ডিনেটর মলয় দাস এর ফোন নাম্বার।
শারমিন ও তাজেনুর নামের দুই প্রশিক্ষণ প্রার্থী জানান, তালতলী নিজ উপজেলার বাসিন্দা হয়েও আমরা প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত। কলাপাড়া, আমতলী, বরগুনা সদর, পটুয়াখালী ও গলাচিপা থেকে এসে তারা ল্যাপটপ ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে, তারা ক্লাস করছে না।শারমিন আরও বলেন,আমি ক্লাস করেছি অদৃশ্য কারনে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি ল্যাপটপের জন্য আবেদন করিনি, ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য আবেদন করেছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাফিক্স ডিজাইনে ৪০ জন, ডিজিটাল মার্কেটিং এ ২০ জন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট ২০ জন, আইটি সার্ভিস প্রোভাইডারে ৮০ জন প্রশিক্ষনার্থী’র নাম রয়েছে। এগুলো শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।অনিয়মিত ক্লাস, ক্লাস হলেও প্রশিক্ষনার্থী উপস্থিতি সংখ্যা থাকে হাতে গোনা কয়েকজন। অন্যরা টাকার বিনিময়ে আত্নীয়করনে ল্যাপটপ নিয়ে উধাও হয়েছে।
জানা গেছে যুবলীগ নেতা কো অর্ডিনেটর (ভ্যান্ডার প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি) মাসুদ রানা, অর্থ বানিজ্যের সিন্ডিকেটে তালতলী উপজেলা যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম (গ্রাফিক্স ডিজাইন, ট্রেইনার) এর সাথে রাজনৈতিক সখ্যতায় একীভূত হয়। তালতলী আইসিটি অধিদপ্তরে আইটি টেকনিশিয়ান রাহাত এর মাধ্যমে শুরু হয় ঘুষ বানিজ্যের রমরমা ব্যবসায়।
তালতলী আইসিটি অধিদপ্তরের আইটি টেকনিশিয়ান রাহাত বলেন, অমিত দত্ত স্যার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও থাকাকালীন সময়ে এরকম অভিযোগ হয়েছিলো তিনি তদন্ত করে সত্যতা না পেয়ে হেট অফিসে প্রতিবেদন দিয়েছে। এটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন।
মাসুদ রানা শিবলী জানান, যারা টাকা দিয়েছে আপনি তাদের তালিকা দিন। টাকা ফেরত দিয়ে দিবো।এ উপজেলায় প্রশিক্ষনার্থী না পাওয়ায় আমি অন্য উপজেলা থেকে সুযোগ দিয়েছি। অথচ এই উপজেলার অনেক মানুষ টাকা দিয়েও ডুকতে পারেনি।
যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম শাহিন (কো-অর্ডিনেটর) আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, তথ্য গোপন করে যদি কেউ ইন হয়ে থাকে সে ব্যাপারটা সম্পন্ন প্রোগ্রামার স্যারের।
কো-অর্ডিনেটর মলয় দাস বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অবিশ্বাস্য। এবং আমতলীর ট্রেইনার শোভনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয় জানার জন্য মুঠোফোনে একাধিক কল করে কিংবা ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সারা মে
কো-অর্ডিনেটর মাসুদ রানা নিজেকে দেশ বুলেটিন এবং অন্য এক সাংবাদিকের কাছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, এ প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও স্যার এবং এটা প্রজেক্ট অফিস সব কিছু ম্যান্টেইন করে। আপনার যদি কিছু জানার থাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন।
তালতলী উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা দীপু সরকার বলেন, এরকম একটা অভিযোগ আসার পর ইউএনও অফিসে যাচাই-বাছাই হয়েছে। তখন তারা দেখলো সব ঠিকাছে। এ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবে কি না জানতে চাইলে এরিয়ে গিয়ে বলেন, এগুলোর প্রমাণ থাকলে আপনি হেট অফিসে দেন।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, আমি এবিষয়ে অবহিত না। যাদের থেকে টাকা নিয়েছে তাড়াও কেউ বলেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।