
নিজস্ব প্রতিবেদক।। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিস্ময়কর এক তারুণ্য জেগে উঠেছিল।ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলা ছিল জাতীয় আকাঙ্খা।বিগত ১৭বছর থেকে গণতান্ত্রিক নতুন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে বিরামহীন লড়াই সংগ্রামের পর ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। কত ত্যাগ, কত ক্ষয়, কত রক্তনদী পেরিয়েছে এই বাংলাদেশ। অজস্র জনের আত্মত্যাগ বিলিয়ে দিতে হয়েছে। এই ছয় মাসে দেশ কি খুব ভালো পথে এগিয়ে যাচ্ছে? প্রতিদিন মন খারাপের কত ঘটনা ঘটছে, খুন ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি দখলবাজি, লুটতরাজ খুব দাপটে চলছে। মানবাধিকার উদ্বেগজনক, পুলিশের চরিত্র মোটেই বদলায়নি! ঘুষ, দূর্নীতি কি কমেছে? নিত্য পণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, শেয়ারবাজারে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে অগণিত মানুষ।এতো অন্যায় অবিচার দেশের মানুষ কি সত্যি স্বাধীন হতে পেরেছে! তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেন এতো দেশপ্রেমিকের জীবনহানী! কেন এতো অঙ্গহানী?আগেই ভালো ছিলাম এই তথ্যটি যদি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায় তাহলে বর্তমানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করছেন, সবাই চরম ভাবে ব্যর্থ হবেন। ফ্যাসিবাদের দোসর ব্যথিত সমগ্র দেশবাসী ৫ই আগস্ট ঐক্যবদ্ধ ছিল, ঐতিহাসিক ভাবে শক্তিশালী ঐক্য হয়েছিল। কিন্তু এই ৬মাসে এতো অনৈক্য কেন? এই ব্যর্থতার দায় নিশ্চয়ই সরকারের,এবং বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বিরোধী দায়িত্ব জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের নিয়ে হানিমুন মেজাজে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে এর চাইতে ভালো কিছু কেমন করে হবে। কয়েক’জন উপদেষ্টার অতি নিরবতা নমনীয়তা জাতিকে হতাশ করছে। একজন নিন্দিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কেমন করে উপদেষ্টা পরিষদে টিকে থাকে?এভাবে চলতে থাকলে বিপ্লবের সমস্ত অর্জন হারিয়ে যাবে। বুঝতে পারছেন! রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি, অগণিত হত্যাকান্ডের দায়ভার কাদের নিতে হবে? দেশকে গৃহ যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে, সরকারকে আরো দৃঢ়তার সহিত কটুর হতে হবে। বিএনপির নেতাদেরকেও উচ্চ বিলাসী চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কতিপয় কর্মীদের অনৈতিক অর্থ বানিজ্য থেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।জামায়াতে ইসলামী কিছু ইউটুবার ভাড়া করে আকারে ইঙ্গিতে বিএনপিরই বিরুদ্ধে কাজ করছেন।অন্যদিকে ডক্টর মিজানুর রহমান আজহারির উপর ভর করে বেশ কিছু সমাবেশের আয়োজন করে তারা এখন অনেক স্বপ্ন নিয়ে আকাশে উড়ছে। জামায়াতে ইসলামীও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে! কিছু উপদেষ্টা এবং ছাত্র সমন্বয়কারী- বিএনপির মধ্যে যথেষ্ট পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে জাতি দিশেহারা।গণ-অভ্যুত্থানের সাফল্য ভবিষ্যত কি হতে পারে? দেশবাসী এখন অনেকটা শঙ্কিত।মনে রাখবেন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কিন্তৃু থেমে নেই, যেকারণে আগেই ভালো ছিলাম এই শব্দটি প্রচার হচ্ছে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। অন্যদিকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, মাহফুজদের অতিরিক্ত দাম্ভিকতা ক্ষমতার লোভে দেশের আগামীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো অনেক জটিল করবে। আগামী দিন বছরগুলো মনে হচ্ছে খুবই অস্পষ্ট, দেশ রক্ষার আন্দোলন সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের কাছে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।একটা ভুল হয়তো মানুষকে অনেক কাঁদায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে জীবনে এমন কিছু ভুল আছে যা ভবিষ্যতে হাজারটা ভুল থেকে বাঁচায়।ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন থেকে যদি শিক্ষা নিতে না পারেন, তাহলে দেশের গণতন্ত্র হিমাঙ্কের নিচে চলে যাবে, ফাঁসিতে ঝুলতে হবে অগণিত জনকে, স্বার্বভৌমত্ব হবে বিপন্ন।
লেখকঃ- মোঃ নিজাম উদ্দিন,সাবেক চেয়ারম্যান
উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদ,ছাতক সুনামগঞ্জ।
সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।