
নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা।। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯–এর কার্যকর বাস্তবায়ন, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন ও বাজার ব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করতে খুলনায় এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়।এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, “ভোক্তার অধিকার সুরক্ষা শুধু আইনি প্রয়োগ নয়, এটি নাগরিক ন্যায্যতার অংশ। বাজারে নকল, ভেজাল ও অতিমূল্য যেন কেউ চাপিয়ে দিতে না পারে, সে জন্য ব্যবসায়ী, প্রশাসন ও ক্রেতা—তিন পক্ষকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে বাজারেও ভারসাম্য আসবে। সরকারের উদ্দেশ্য কারও ক্ষতি নয়, বরং নিরাপদ খাদ্য, ন্যায্য মূল্য ও সঠিক সেবা নিশ্চিত করা।”তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই জনগণ জানুক—তাদের অধিকার কী, কোথায় অভিযোগ করতে হবে, আর প্রশাসন কীভাবে তাদের পাশে আছে। দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় এখন নিয়মিত বাজার অভিযান, পণ্যের মান যাচাই এবং আইন সচেতনতা কার্যক্রম চলছে।”খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সচিব) মো. হুসাইন শওকাত বলেন, “ভোক্তা অধিকার আইন বাস্তবায়ন সরকারের একটি মানবকেন্দ্রিক উদ্যোগ। বাজারে পাইকারি ও খুচরা দামের অস্বাভাবিক ব্যবধান, রাস্তার সংস্কার বিলম্ব, স্বাস্থ্যসেবায় অতিমূল্য আদায়—এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিয়মিত কাজ করছে। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে অভিযোগ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, “ভোক্তা অধিকার রক্ষায় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঠপর্যায়ে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু তদন্তকর্মী কম। তারপরও খুলনায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। ভেজাল, অতিমূল্য কিংবা প্রতারণা—যে অভিযোগই আসুক, তা উপেক্ষা করা হচ্ছে না। শাস্তিমূলক নয়, সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”সময়ের খবর পত্রিকার সম্পাদক তরিকুল ইসলাম আলোচনায় বলেন, “বাজার ব্যবস্থায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে গণমাধ্যম ও প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পরও অনেক সময় কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ডুমুরিয়া পাইকারি কাঁচা বাজারের একটি বাস্তব ছবি স্পষ্ট—যদি কোনো পণ্যের পাইকারি দাম ১০ টাকা হয়, সেটি শহরের খুচরা বাজারে এসে ৩০ টাকা হয়ে যায়। এই মধ্যবর্তী মূল্যবৃদ্ধিই বাজার ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করছে। এখানে একটি নির্ধারিত ‘মধ্যবর্তী মূল্য তালিকা’ থাকা উচিত, যাতে পাইকারি বাজার থেকে সরাসরি নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য পৌঁছাতে পারে। এতে দরিদ্র ও গরীব মানুষ শান্তিতে খাবার কিনতে পারবে, ব্যবসায়ীরাও সুবিচার পাবে এবং বাজারে সঠিক মূল্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি বিশ্বাস করি—যদি এমন একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়, তবে শুধু ভোক্তা নয়, গোটা সমাজই উপকৃত হবে। এটি শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বরং ন্যায়ের বিজয়। ”সাংবাদিক নুরুজ্জামান বলেন, “ভোক্তা অধিকার আইন তখনই সফল হবে, যখন মানুষ নিজের অধিকার নিজে চিনবে। একজন ভোক্তা যদি প্রতারিত হয়ে চুপ থাকে, তবে পুরো সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসন ও গণমাধ্যমের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব আছে—অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করার।”সেমিনারে খুলনা জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।