
ডেস্ক রিপোর্ট : জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ফাঁস এবং বিক্রির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজধানীর কাফরুল থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া এ মামলায় জয় ও পলকসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ১৫ থেকে ২০ জনও রয়েছেন আসামি তালিকায়। এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে এ মামলা করেন। ওই মামলার আসামিদের মধ্যে ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিদের সহায়তায় জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা বেইজের হুবহু কপি দেওয়া হয় জাতীয় কম্পিউটার কাউন্সিলের দখলে। জাতীয় কম্পিউটার কাউন্সিল এবং আসামিরা এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার অনুমতি দেন। জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ১১ কোটি ২১ লাখ এনআইডির তথ্য দেশ-বিদেশের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে ডিজিকন। তথ্য বিক্রি করে আসামিরা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তথ্য বিক্রির এ ঘটনায় জনগণের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই মামলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটির বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব তথ্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় ২০ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, তথ্য চুরির ঘটনায় ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি আছে। এর বাইরে আরও ১৫ থেকে ২০ জন আসামি আছে। তারা পরস্পরের যোগসাজশে এ কাজের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বাদীর যে লিখিত এজাহার, সেখানে তিনি জানিয়েছেন, একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের নাগরিকদের তথ্য বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তিনি যেসব আসামির কথা উল্লেখ করেছেন, সে হিসেবেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, আইসিটি এবং জাতীয় কম্পিউটার কাউন্সিলের কয়েকজন কর্মকর্তা এটির সঙ্গে জড়িত আছেন।
নির্বাচন কমিশনের কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না—জানতে চাইলে উপকমিশনার তালেবুর বলেন, এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। বিস্তারিত তদন্ত হলেই সবকিছু বের হয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এবং বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের কাজে এসব তথ্য ব্যবহার করা হতো। এক্ষেত্রে তো নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই আছে। আমরা সবকিছুই তদন্ত করছি।
জয় ও পলক ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসের পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরিফ, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহাবুবুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) আবদুল বাতেন, সাবেক সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার জনাব মু. আশরাফ হোসেন, এনটিএমসির কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল অব. মো. রাকিবুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম, সাবেক উপসচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহফুজুল, স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সাবেক সিস্টেম অনালিস্ট অলিউল হাসান, আইসিটি বিভাগের সাবেক উপসচিব মো. তবিবুর, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (বৈধ ও সঠিকতা যাচাইকরণ) সাবেক সহকারী পরিচালক মুহা. সরওয়ার হোসেন, সাবেক পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার, সাবেক পরিচালক (বাজেট, হিসাব ও সাধারণ সেবা) তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ম্যানেজার (সিকিউরিটি ও অপারেশন) মোহাম্মদ মহিদুর রহমান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সফটওয়্যার ডেভেলপার মো. সিদ্দিকুর রহমান।
জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০১৯ সালে গত সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে থাকা সব নাগরিকের তথ্যভান্ডারের কানেক্টিভিটি চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের পরিচিতির তথ্য দিতে ‘পরিচয়’ (porichoy) নামে একটি অ্যাপ চালু করে আইসিটি বিভাগ। এর মাধ্যমে আইসিটি বিভাগ নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারের তথ্য যাচাই করার সুযোগ পায়। সেসময় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল আইসিটি বিভাগকে শুধু এনআইডির মিরর কপি দেওয়া হবে। এতে তারা তথ্যভান্ডারের নিরাপত্তা ভেদ করে প্রবেশ করতে পারবে না। নাগরিকের তথ্য কেবল পড়তে পারবে, তারা কোনো তথ্য ডিলিট বা এডিট করতে পারবে না।